জিরো থেকে হিরো: একটি অনুপ্রেরণার গল্প (সত্য ঘটনা অবলম্বনে) – সামাদ আজাদ - Bangladeshi Jobs Circular and Exam Preparation Blog

Latest

This website for Bangladeshi jobs circular and exam preparation blog. Government Jobs, Non-Government Jobs all kinds jobs circular will be published here.BCS, Non-Cadre Jobs extra care blog.

BANNER 728X90

Tuesday, August 1, 2017

জিরো থেকে হিরো: একটি অনুপ্রেরণার গল্প (সত্য ঘটনা অবলম্বনে) – সামাদ আজাদ

জিরো থেকে হিরো

একটি চাকুরির ভাইভাতে ……
যুগ্ম সচিব : তুমি জান তুমি কোন পদের জন্য ভাইভা দিতে এসেছ?
প্রার্থী : জ্বি স্যার, আমি জানি। আমি স্টোর কিপার পদের জন্য ভাইভা দিতে এসেছি।
যুগ্ম সচিব : তুমি অর্থনীতি বিষয়ের উপর স্নাতকোত্তর পাশ করেছ। রেজাল্টতো খুব ভাল। তোমাকে দেখেওতো পরিশ্রমী মনে হয়। তুমি কেন এই ৩য় শ্রেণীর জবে আসতে চাও? (একটু উচ্চস্বরে)
প্রার্থী : স্যার, স্যার! খুব শীঘ্রই আমার একটা চাকুরি দরকার, খুব দরকার। আমার বাবা পঙ্গু, মা নেই। পঙ্গু বাবার চিকিত্সা করাতে পারছি না। টিউশন চালিয়ে আর পারছি না। পাস করে অনেকদিন বসে আসি। ঢাকায় এসে কয়েকটি পরীক্ষা দিয়েছি। কিন্তু কোথাও হচ্ছে না। একের পর এক ব্যর্থ হচ্ছি।
যুগ্ম সচিব : হুম, হোচট খাওয়া মানে হেরে যাওয়া নয়, জয়ের অনিহা থেকেই পরাজয় শুরু হয়। তুমি আরো ভাল করে প্রস্তুতি নাও। আরো ভাল জবের জন্য, আরো ভালো কিছুর জন্য লেগে থাকো।
প্রার্থী : জ্বি স্যার, আমি চেষ্টা করছি।
যুগ্ম সচিব : তবে হচ্ছে না কেন? নিশ্চয়ই তোমার প্রস্তুতির ঘাটতি আছে, তাই না?
প্রার্থী : জ্বি স্যার।
যুগ্ম সচিব : এই দেখো, আমি তোমাকে ভাইভাতে জিরো দিলাম। জিরো মানে জিরো। এত বড় করে একটা জিরো দিলাম। এই পদে আছে শুধু কালো টাকা। এখানে একবার ঢুকলে তুমি হারিয়ে যাবে। নিজেকে আর খুঁজে পাবে না। আমি তোমাকে ফেল করিয়ে দিলাম।
প্রার্থী : স্যার, স্যার!
যুগ্ম সচিব : না, তোমাকে আমি এই জবে আসতে দিব না। আরো ভাল করে প্রস্তুতি নাও। বিসিএস, নন ক্যাডার, ব্যাংক বা অন্যান্য ভাল জবের জন্য চেষ্টা করো। আমার ভিজিটিং কার্ডটা রাখো। আর আমি মাঝে মধ্যে বেইলি রোড, অফিসার্স ক্লাব এ সময় দেই। কখনো প্রয়োজন হলে যোগাযোগ করবে। যাও, এখন তুমি যাও। (মৃদু হেসে)
প্রার্থী : জ্বি স্যার! দোয়া করবেন স্যার। (কিছুটা আবেগ তাড়িত হয়ে)
.
৭/৮ মাস পর ……
আমি (সেই প্রার্থী) সোনালি ব্যাংক এ ‘সিনিয়র অফিসার’ পদে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলাম। সামনেই ভাইভা। যুগ্ম সচিব স্যারের কথা মনে পড়লো। বার বার ভিজিটিং কার্ড এর মুঠোফোন নম্বরে কল দিলাম। কয়েক দিন চেষ্টা করলাম। স্যার কে পেলাম না। এরপর ছুটে গেলাম বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাবে। কিন্তু কয়েকবার গিয়েও আমি স্যারকে পেলাম না। চতুর্থবার যখন গেলাম তখন ভাগ্য ফিরে তাকালো। অবশেষে স্যার কে পেলাম!!
.
যুগ্ম সচিব : কি খবর ইয়াং ম্যান? হাউ আর ইউ?
প্রার্থী : স্যার ভাল। স্যার, আমি একটি সরকারী ব্যাংক এ ‘সিনিয়র অফিসার’ পদে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। আমি গত ৭-৮ টা মাস অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি। খুব সুন্দর করে নিখুঁতভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছি। সামনে আমার ভাইভা। আমার জন্য দোয়া করবেন স্যার।
যুগ্ম সচিব : হুম, ঠিক আছে। তুমি ভাল করে ভাইভা দাও। নিজ সাবজেক্ট নিয়ে ভাল করে প্রস্তুতি নিয়ে যাও। আর তোমার admit card টা আমাকে mail করে দিও। আমি বলে দিব।
প্রার্থী : অনেক অনেক ধন্যবাদ স্যার। খুশি হয়ে ফিরে এলাম।
(আসলে যুগ্ম সচিব স্যার কিছুই করেননি, কোন সুপারিশই করেননি! কারণ উনি জানতেন, ব্যাংক ভাইভাতে মাত্র ২০-৩০ নম্বর থাকে। প্রায় সবাইকেই একটা গড় নম্বর দেয়া হয়। লিখিত পরীক্ষা ভাল দিলে থাকলে চাকুরিটা এমনিতেই হয়ে যাবে। আমি কেন উনার কাছে ছুটে গিয়েছিলাম, সেটা উনি ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন। তাই আমাকে একটু সান্তনা দেয়াই ছিল তার উদ্দেশ্য। উনি আমার মনটা ভাঙ্গতে চাননি।)
.
কয়েক মাস পর ……
আমি সেই সরকারী ব্যাংক এ ‘সিনিয়র অফিসার’ পদে নিয়োগ পেলাম। স্যারকে জানালাম। স্যার খুব খুশি হলেন। স্যার জানতে চাইলেন, আমার next প্ল্যান কি? আমি বললাম, স্যার আমি ৩৪ তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার্থী। এটা শুনে স্যার আমাকে খুব ভাল করে লিখিত পরীক্ষা দেয়ার কথা বললেন। ৩৪ তম বিসিএস (লিখিত) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলাম। লিখিত পরীক্ষায়ও পাস করলাম। আমার ঢাকার বাহিরে পোস্টিং ছিল। তাই সরাসরি স্যারের সাথে দেখা করতে পারলাম না।
.
একদিন স্যারকে ফোন দিলাম ……
প্রার্থী : স্যার, আমি ৩৪ তম বিসিএস (লিখিত) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। অচিরেই আমার ভাইভা শুরু হবে।
যুগ্ম সচিব : ভেরি গুড, ইয়াং ম্যান! শোনো, মনোযোগ দিয়ে শোনো। ভাইভাতে খুব আত্মবিশ্বাস রাখবে। এতটুকু ঘাবড়াবে না। কেউই সব জানে না, কেউই সব পারে না। বিসিএস ভাইভাতে মেধার চেয়ে প্রার্থীর overall যোগ্যতা এবং ক্যাডার পদের জন্য প্রার্থীর suitability কতটুকু – সেটা বেশি গুরুত্বের সহিত দেখা হয়। সোজা কথা, যাকে দেখে বেশ উপযুক্ত মনে হবে, তাকে জিজ্ঞাসা করবে, “বারাক ওবামা কে?” আর যাকে একেবারেই উপযুক্ত মনে হবে না, তাকে জিজ্ঞাসা করবে, “বলো, বারাক ওবামার মায়ের নাম কি?”
প্রার্থী : জ্বি স্যার। আপনার কথাগুলো মনে থাকবে স্যার।
.
সেটা ছিল – ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সাল। ৩৪ তম বিসিএস এর ভাইভা দিলাম।
বোর্ড ছিল – শরিফ এনামুল কবির স্যারের। ভাইভাটা মন্দ হলো না।
অত:পর আগস্ট, ২০১৫ সাল। ৩৪ তম বিসিএস এর চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষিত হলো।
বিসিএস (কর), সহকারী কর কমিশনার পদে নিজের রোল সুপারিশকৃত দেখলাম!.
আবেগে ভেসে গেলাম। চোখ দুটি জলে ভরে এল। আমিতো জানি, গত ৩-৪ টা বত্সর আমি কতটা কষ্টে দিনানিপাত করেছি। বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে কতরাত আমি নির্ঘুম কাটিয়েছি। একসময় আমার দু-চোখ শুধু আঁধারের রুপ দেখে নি:শেষ হয়ে যেত। চাকুরিতে আবেদনের টাকা টুকু ধার করতে হতো। এরপরও একের পর এক চাকুরির নিয়োগ পরীক্ষায় হেরে যেতাম। আজ আমি জয়ী। জিরো থেকে হিরো। স্টোর কিপার এর সেই ভাইভায় জিরো পেয়েছিলাম। সেই চাকুরিটা পাবার ব্যর্থতাই আজ আমার জীবনের বড় সফলতা।
.
স্যারের কথা খুব খুব মনে পড়লো।
মনটা বলে উঠলো,
‘তোমার দৃষ্টিসীমায় আশ্রয় পেয়েছিল আমার জীবনের দুঃসময়। আজ আমার সুসময়, বড় সুসময়।’
.
স্যার বলেছিলেন,
‘হোচট খাওয়া মানে হেরে যাওয়া নয়,
জয়ের অনীহা থেকেই পরাজয়টা শুরু হয়।’
লেখক:
সামাদ আজাদ
প্রাক্তন ব্যাংকার

No comments:

Post a Comment